বিদায় হেমন্ত
- শেখ ফরহাদ হোসেন ১৯-০৫-২০২৪

তোমাকে চিনি আমি;
দীর্ঘ সাতাশ বছর তেমার সাথে পরিচয়;
জানাশোনা অন্তরঙ্গও বেশ।

ছোট ছোট পায়ে তোমার সবুজ আঁচল স্পর্শ করা সেই শিশুটি আমি।
একবার দু'বার নয়,এজীবনে সাতাশবার তোমার দেখা পেয়েছি;
তুমি আমার অন্তরের প্রতিটি শব্দের মানে জানো।
আমি জানি তোমার একেক ফোঁটা শিশির বিন্দুর মাদকতা।

তোমার স্পর্শের সুখে শরতের মায়া কাটিয়েছি ;
তোমার এক হাতে হাত রেখে অন্য হাতে শীতকে আপন করেছি;
কুয়াশার সমূদ্র পাড়ি দিয়ে নক্ষত্রের পানে চেয়ে তোমার নিশ্বাসে ভর দিয়ে উদযাপন করেছি একহাজার ছয়'শ বিশটি সন্ধ্যা।

হেমন্ত,তুমি চলে যাবে তো!
যেতেই যদি হবে তবে যাও
তোমাকে ফেরাবার সাধ্যি আমার নেই।
আমি মর্ত্যলোকের নিতান্ত ক্ষুদ্র এক মানব;
শৃঙ্খলার বাঁধনে বাধা হতভাগ্য প্রাণ।

এই বাংলার বুকে জন্ম বলেই তোমার অশ্রু জলে চরণ স্পর্শ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে।
হে বন্ধু আমি গর্বিত, তোমার বুকে নিশ্বাস নিতে পেরেছি বলে।
আমি গর্বিত,তোমার করতলে আশ্রয় পেয়েছি বলে।

বিদায় বেলার এই মহেন্দ্র ক্ষণে তোমাকে দেবার দু'ফোঁটা অশ্রু বিনে কিছু নেই আমার।
তুমি তো চলেই যাবে, যে পথে এসেছিলে তার বিপরীতে প্রতিটি দিনের মতো, রাতের মতো,চন্দ্র,সূর্য,নক্ষত্রের মতো।

জানি তুমি আবার আসবে কবিদের ডাকে সারা দিতে,নবান্নের উৎসবে কৃষাণীর থালা ভর্তি পিঠের ঘ্রাণে।
তুমি আবার আসবে মাঠে মাঠে শিশুদের কোলাহলের ভীড়ে।
আবার আসবে তুমি একবুক শিশির নিয়ে কোন এক রাত জাগা পাখি হয়ে,শ্রমিকের অবসরের হাঁসি হয়ে
শরতের বুকে পা ফেলে তুমি আসবে।

অনিশ্চয়তার জীবন তরী নিয়ে হয়ত আমিও থাকব তোমার অপেক্ষায়,
হয়ত আবার নক্ষত্র দেখা হবে তোমার সাথে
তবু বিদায়ের এই ক্ষণ বড় বেদনাময়।
তোমার আমার দু'ফোটা অশ্রু তোলা রইল স্মৃতির পৃষ্ঠায়।
ভালো থেকো হেমন্তের শিশির,
ভালো থেকো কুয়াশার পাহাড়
বিদায় হলুদ ঋতু বিদায়
বিদায় সবুজ ঋতু বিদায়।

২৭-১১-২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

কবিতাটির উপর আপনার মন্তব্য জানাতে লগইন করুন।

মন্তব্যসমূহ

এখানে এপর্যন্ত 0টি মন্তব্য এসেছে।